ফিরোজ মাহবুব কামাল
মিয়ানমারের মুসলমানেরা আজ ভয়ানক বিপদের মুখে। তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশ, সৈন্যরা লাশগুলোকে দাফন করতে না দিয়ে গায়েব করে দিচ্ছে। এশিয়ান করেসপন্ডেন্ট ডট কমের সাংবাদিক ফ্রান্সিস ওয়াদের রিপোর্ট, পুলিশ দাঙ্গাকারি বার্মিজদের সাথে মিলে মুসলমানদের ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে। পুলিশ মুসলমানদের দিকে তাক করে গুলি ছুঁড়ছে। এমনও রিপোর্ট আসছে, নিহত ও আহত মুসলমানদের মাথা মুড়িয়ে ও গায়ে গেরুয়া পোশাক পরিয়ে ছবি তুলে বৌদ্ধ বলে বিশ্বময় প্রচার চালাচ্ছে। সমুদ্রে নামা ছাড়া মুসলমানদের সামনে আশ্রয় লাভের কোন স্থান নেই। বাংলাদেশই একমাত্র প্রতিবেশী মুসলিম দেশ। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে আসাও তাদের জন্য অসম্ভব করা হয়েছে। আহত ও ক্ষুধার্ত নারী-শিশুদের নিয়ে তাদের নৌকাগুলো দিবারাত্র সাগরে ভাসছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য এ এক নিদারুণ দুরবস্থা।
ঘরবাড়ি আগুনে বিধ্বস্ত হলে পাশের প্রতিবেশী আশ্রয় দিতে এগিয়ে আসে। তেমনি কোন দেশে একটি জনগোষ্ঠি নির্মূলের মুখে পড়লে প্রতিবেশী দেশ এগিয়ে আসে। কিন্তু পাশে সমুদ্র ছাড়া মিয়ানমারের মুসলমানদের সে রকম প্রতিবেশী নেই। তাদের দুর্ভাগ্য, তারা প্রতিবেশী রূপে পেয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত আগ্রাসন শুরু হয়ে তখন তিরিশ লাখ আফগান নাগরিক তিরিশ বছর যাবত পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল। ২০ লাখ আশ্রয় নিয়েছিল ইরানে। সাতচল্লিশে লাখ লাখ ভারতীয় মুসলমানগণ জানমাল বাঁচাতে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল। একইভাবে ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ ফিলিস্তিনী প্রতিবেশী আরব দেশগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি সিরিয়ার হাজার হাজার নাগরিক আশ্রয় নিচ্ছে পাশ্ববর্তী তুরস্ক, জর্দান ও লেবাননে। ইতিহাসে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। অসহায় উদ্বাস্তুদের প্রবেশ রুখতে কোন প্রতিবেশী দেশই দরজা বন্ধ করে দেয় না। মিয়ানমারের মুসলমানেরা প্রতিবেশী থেকে সেরূপ আচরণ পায়নি।
বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড
বাংলাদেশ অতীতে ৫ বার রেকর্ড করেছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বৃত্তকবলিত দেশ রূপে। এবার আরেক রেকর্ড যোগ হলো। সেটি হৃদয়হীনতার। প্রতিবেশী রূপে বাংলাদেশ যে কতটা খারাপ সেটিই বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ করলো। মিয়ানমারের মুসলমানদের এটি এক বড় দুর্ভাগ্য। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষিবাহিনী, কোস্টাল গার্ড ও পুলিশ বাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানভর্তি নৌকাগুলোকে বাংলাদেশের সীমান্তে ভিড়তে দিচ্ছে না। সীমান্তরক্ষিরা তাদের পুশব্যাক করছে। কক্সবাজারের ১৭ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল খালেকুজ্জামান পিএসসি বলেন, সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। গতকাল সীমান্ত দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেনি। নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ১৫ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব বলেন, পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে কোনো রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। -(সূত্রঃ নয়াদিগন্ত, ১৪/০৬/১২)। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে না দেয়াই যে সরকারি নীতি এ হলো তার প্রমাণ। অথচ আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক বাংলাদেশ দায়বদ্ধ এমন উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়া। জান বাঁচানোর স্বার্থে কেউ যদি অন্য দেশে প্রবেশ করে তবে কোন সভ্যদেশেই তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারি বলে না। জানা বাঁচানো প্রতিটি নাগরিকেরই মৌলিক মানবিক অধিকার। সেটি কোন দেশে বিপন্ন হলে সে অন্য যে কোন দেশে আশ্রয় নেয়ার অধিকার রাখে। সেটিই আন্তর্জাতিক নীতি।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে সরকারের প্রতি ইতিমধ্যে আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি আবারও সে দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। সরকারের অনড় অবস্থানের ফলেই গতকাল ১১৪ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়নি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড। (সূত্রঃ আমার দেশ, ১৪/০৬/১২)। এভাবে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দিল, দেশটি শুধু হাত পেতে ত্রাণ নিতেই জানে, দিতে নয়। তারা শুধু দুর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হওয়ার সামর্থই রাখে না, বিপদে পড়া প্রতিবেশীদের প্রতি অতি নির্দয় ও নিষ্ঠুর হওয়ারও সামর্থ রাখে। একটি জনগোষ্ঠির বিবেকের পচন আর কত কাল এভাবে প্রকাশ পেতে থাকবে?
লক্ষণীয় হলো, নির্দয়তা শুধু সরকারের একার নয়। বরং আক্রান্ত যেন সমগ্র দেশ। মুসলিম উৎখাতের ন্যায় নিষ্ঠুরতা থামাতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে যেমন কোন উদ্যোগ নেই, তেমনি সে মুসলিম-নির্মূল নীতির বিরুদ্ধে ঢাকার রাস্তায়ও কোন প্রতিবাদ নাই। বাংলাদেশ সরকারের মানবতাশূন্য নীতির বিরুদ্ধে দেশের বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, লেখক-বুদ্ধিজীবী, ছাত্রশিক্ষক ও আলেম-উলামাদের পক্ষ থেকেও কোন নিন্দাবাদ নাই। মিয়ানমারের মুসলিম-নির্মূলে বিষয়টি নতুন নয়। আশির ও নববইয়ের দশকের শুরুতে একই রূপ নির্মূল অভিযান শুরু হয়েছিল। হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে তখন দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদের বহু হাজার মুসলমান এখন বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়ে আছে।
দেশহীন থেকে গৃহহীন
আরাকানের মুসলমানদের সাথে বড়ই অবিচার হলো তারা শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও তাদের সে দেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি। এর চেয়ে বড় অবিচার আর কি হতে পারে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে মাত্র ৫ বছর বৈধ বসবাসের সার্টিফিকেট দেখাতে পারলে নাগরিকত্ব দেয়া হয়। অথচ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের শত শত বছর ধরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপ ও আফ্রিকা থেকে বসতি স্থাপনকারিগণ যত বছর ধরে বসবাস করছে তার চেয়ে বেশী বছর যাবত আরাকানে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা। অথচ তাদের নাগরিত্ব না দিয়ে এখন বহিস্কারের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। নাগরিকতা দেয়া হয়নি নিছক ধর্মীয় কারণে। আর এখন তাদের গৃহহীন করা হচ্ছে।
প্রতিদেশেই নানা ধর্ম, নানা ভাষা ও নানা বর্ণের মানুষ দিয়ে গড়ে উঠে। বাংলাদেশে যেমন মুসলমানের পাশাপাশি হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান আছে তেমনি বাংলাভাষীদের পাশে বহু অবাঙালীও আছে। বহু চাকমা, গারো, হাজং, মুনিপুরি, মগও আছে। শুধু এক ধর্ম, এক ভাষা ও এক বর্ণের মানুষ দিয়ে দেশ গড়ার প্রেরণাটি অতি অসুস্থ চেতনার। সে অসুস্থ চেতনার মানুষেরা ভিন্ন জাতিসত্ত্বার মানুষদের নির্মূল করার ন্যায় ভয়ানক অপরাধটি ঘটায়। জার্মানীতে ইহুদীদের বিরুদ্ধে সেটিই ঘটেছিল। তেমনটি ঘটেছে ইসরাইল ও বসনিয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে। আজ একই অপরাধ ঘটছে মিয়ানমারে। মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ থেকে ভিন্নতর ধর্ম ও ভাষা হওয়ার কারণেই কারো নাগরিকত্ব হরণ করা যায় না। অথচ মিয়ানমারে সেটিই হয়েছে। এমনটি হয়েছে মুসলিম ভীতি থেকে। মুসলমানদের নাগরিকত্ব হরনের কারণ রূপে দেখানো হচ্ছে তারা এসেছে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ থেকে। কথা হলো তারা যদি বাংলাদেশ থেকে গিয়েও থাকে সেজন্য কি তাদের নাগিরকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যায়? নানা দেশে বিচিত্র মানুষের যে সংমিশ্রণ দেখা যায় তার কারণ এ নয় যে মানুষগুলো আসমান থেকে নাযিল হয়েছে। বরং আসে পার্শ্ববর্তি দেশ থেকে। বাংলাদেশে বহু মানুষ ভারত থেকে এসে বসতি গড়েছে, সেটি যেমন শত শত বছর আগে, তেমনি অনেকের আগমনের বয়স ৬৫ বছরের বেশি নয়। তেমনি বহু মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েও বসবাস করছে। মানুষ যেমন জন্ম নেয়, তেমনি মাইগ্রেশনও করে। সেটিই সভ্যতার রীতি। হাজার হাজার বছর ধরে সে রীতি চলে আসছে। কিন্তু সে মাইগ্রেশনের জন্য কি কারো নাগিরত্ব হরন করা যায়? অথচ সে নিদারুণ অবিচার হচ্ছে মিয়ানমারের মুসলমানদের সাথে।
মুসলিম বসতি হাজার বছরের
আরাকানে মুসলমানদের বসতি হাজার বছরেরও বেশী পুরোন তার পিছনে দলিল রয়েছে। সে দলিল রয়েছে খোদ মিয়ানমারে। সেখানে মুসলমান বসতির সূত্রপাত প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ডঃ মুহাম্মদ এনামুল হক আরাকানের জাতীয় ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ ‘রাজোয়াং' থেকে নিম্নোক্ত বিবরণটি উদ্ধৃত করেছেনঃ ‘‘খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর শেষ পাদে যখন আরাকান রাজ মহতৈং চন্দয় (Mahatoing Tsandya-788-810 A. D) রাজত্ব করিতেছিলেন, তখন কতকগুলি মুসলমান বনিক জাহাজ ভাঙ্গিয়া যাওয়ার ফলে আরাকানের দক্ষিণ দিকস্থ ‘রনবী' (আধুনিক রামরী) দ্বীপে উঠিয়া পড়েন।তাঁহারা আরাকানীগণ কর্তৃক ধৃত হইয়া রাজার সম্মুখে নীত হয়েছিলেন।রাজা তাঁহাদের দুরবস্থা দেখিয়া দয়া পরবশ হইয়া তাঁহাদিগকে স্বীয় রাজ্যে গ্রামে গিয়া বসবাস করিতে আদেশ দিয়াছিলেন।’’ ডঃ এনামুল হক মনে করেন যে, ‘‘রাজোয়াং এ উল্লেখিত এ সব মুসলমান বণিক আরব দেশীয় ছিলেন এবং চাঁটগা থেকে উপকূল বেয়ে দক্ষিণ মুখে যাবার পথে, কিংবা দক্ষিন উপকূল হয়ে উত্তরে চাটগাঁর দিকে এগুবার সময়ই ঝঞ্জাতাড়িত হয়ে সম্ভবতঃ তাঁরা রামরী দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।’’ সুপ্রাচীন আরবীয় ঐতিহ্য অনুসারে একই সাথে জীবিকা অর্জন ও ধর্ম প্রচারের সুমহান চেতনায় উদ্ধৃদ্ধ হয়ে মুসলমানেরা দলে দলে নৌ ও স্থলপথে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ সমুহে ছড়িয়ে পড়েছিল। এরই অংশ হিসেবে খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীর প্রারম্ভে বার্মায় মুসলিম উপনিবেশ গড়ে উঠে। জীবন-জীবিকার অনিবার্য প্রয়োজনে স্থানীয় মহিলাদেরকে বিবাহ-শাদী করে তাঁরা সেখানে ধনে-জনে বর্ধিত হতে থাকে।
পরীক্ষার মুখে বাংলাদেশের মুসলমান
আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের এ ভয়ানক বিপদে বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর বিশাল দায়ভার। আল্লাহতায়ালা মানুষকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন।কখনো তার নিজের উপর বিপদ দিয়ে, আবার কখনো প্রতিবেশীর উপর বিপদ দিয়ে। বাংলাদেশের মুসলমানগণ তাই এখানে এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। এ পরীক্ষায় ফেল করলে শুধু মানব জাতির ইতিহাসেই তাদের কদর্যতা বাড়বে না, আল্লাহর দরবারেও তাদের ব্যর্থতা বাড়াবে। প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে প্রতিবেশী মাত্রই সর্ব সামর্থ নিয়ে সে আগুন থামানোর চেষ্টা করে। প্রতিবেশীর মাঝে সে তাড়না না থাকলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তিটি অমানুষ। জন্তু-জানোয়ার ও উদ্ভিদের সে সামর্থ থাকে না বলেই তারা ইতর। প্রতিবেশী-সুলভ এমন কাজের জন্য মুসলমান হওয়ার প্রয়োজন পড়েনা। এমনকি অমুসলিম কাফেরগণও সে কাজ করে। তবে মুসলমানদের উপর সে পরীক্ষাটি আরো বেশী বেশী আসে। কারণ জাহান্নামের আগুন থেকে রেহাই দিয়ে জান্নাতে মৃত্যুহীন এক অনন্ত জীবন দেয়ার আগে আল্লাহতায়ালা তাদের যাচাই বাছাই করে নেন। তাই সে চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলি আসে সে যাচাই বাছাইয়ের অপরিহার্য অংশ রূপে। সে পরীক্ষায় পাশ করার তাগিদে মুসলমান তাই শুধু প্রতিবেশীর ঘরের আগুন নেভাতে ছুটে যায় না, তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতেও সচেষ্ট হয়।
মুসলমানদের সাথে সে ভ্রাতৃত্বের সে বন্ধন গড়তে হয় ভাষা, বর্ণ, আঞ্চলিকতার উর্ধ্বে উঠে। তাই আরবের আলী (রাঃ) ও উমর (রাঃ), ইথিওপিয়ার বেলাল (রাঃ), পারস্যের সালমান (রাঃ) এবং গ্রীকের সোহায়েল (রাঃ) সে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। এমন মুসলমানদের নিয়েই আল্লাহপাক গর্ব করেন; ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও আঞ্চলিকতার গর্বে ভেসে যাওয়া বর্ণবাদীদের নিয়ে নয়। তাই শুধু মসজিদ মাদরাসা বাড়িয়ে আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়া যায় না, একক উম্মতের চেতনায় ভ্রাতৃত্বও গড়ে তুলতে হয়। সে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে খেলাফতও গড়তে হয়। নইলে আজ যে বিপদ আরাকানের মুসলমানদের উপর নেমে আসছে সেটি বাংলাদেশের মুসলমানদের উপরও একদিন নেমে আসতে পারে।
মিয়ানামারের রোহিঙ্গাদের বিপদে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন বাঙালী জাতিয়তাবাদীদের চেতনায় কোনরূপ দুঃখ নেই। ভারতীয় নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ লিখেছিলেন, কোন তুর্কি সৈনিকের পায়ে যদি কাঁটা বিদ্ধ হয় আর সে কাঁটার ব্যথা যদি তুমি হৃদয়ে অনুভব না করো তবে খোদার কসম তুমি মুসলমান নও। -(মাওলানা আবুল কালাম আযাদ রচনাবলি, ইসলামী ফাউন্ডেশন)। মাওলানা আযাদ যে সময় এমন কথা লিখেছিলেন তখন খেলাফত বাঁচাতে তুর্কি সৈনিকেরা শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড লড়াই লড়ছিল।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের পায়ে আজ কাঁটা বিঁধছে না, বরং গুলীবিদ্ধ হচ্ছে তাদের দেহে। এবং ভস্মীভূত হচ্ছে তাদের ঘরবাড়ী-দোকানপাট। তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের নিজ দেশ থেকে। সে গুলির বেদনা এবং সে ঘরবাড়ী ভস্মীভূত হওয়ার দুঃখ কি বাঙালী জাতিয়তাবাদীরা অনুভব করেন? যাদের মধ্যে সে বেদনা নাই তাদের কি মুসলমান বলা যায়? বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আরাকানে মুসলিম নিধন করা মিয়ানমারের আভ্যন্তরীন বিষয়।তিনি আরো বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ ঠিক হবে না। দায়িত্বহীনতা আর কাকে বলে? অথচ আন্তর্জাতিক নীতি হলো, যখন কোন জনগোষ্টির বিরুদ্ধে নির্মূল প্রক্রিয়া চলে তখন সেটি আর সে দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না। সেটি আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়। এমন প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ তখন অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাছাড়া মুসলমান হওয়ার অর্থই হলো দায়িত্বশীলতা, সেটি যেমন আল্লাহর প্রতি তেমনি প্রতিবেশী মুসলমানদের প্রতি। বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে সে প্রতিবেশী হলো রোহিঙ্গা মুসলিম। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ কি তেমন দায়িত্বশীল রূপে নিজেদের পরিচয়টি দিতে পারছে?